মণিরামপুরের সমাজসেবা অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় জেলা কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার আলোচিত সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রা ক্ষরীক জহিরুল ইসলাম । এতে জেলা সমাজসেবা অফিসারের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে । ক্ষোভ বাড়ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে । ইতিমধ্যে ঘটনাটি অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা ।গত ২০ জানুয়ারি দাপট কমেনি মণিরামপুরের সমাজসেবা কর্মকর্তার শিরোনামে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন মণিরামপুরের উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রোকনুজ্জামান ও অফিস অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রা ক্ষরীক জহিরুল ইসলাম । সংবাদ প্রকাশের পর বেসামাল হয়ে বন্ধের জন্য বিভিন্ন স্থানে তদবির করে যাচ্ছেন । এদিকে দুনীর্তিপরায়ণ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রা ক্ষরীক জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে দুনীর্তি ও অনিয়মের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য । সুত্র বলছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর রোকনুজ্জামানের বাড়ি সাতক্ষীরা হলেও বিগত সময় তিনি নিজেকে গোপালগঞ্জের লোক বলেই পরিচয় দিতেন। মণিরামপুরে ঘর জামাই থাকার সুবাদে সমস্ত উপজেলাব্যাপী শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন । মণিরামপুরে সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও এককালীন চিকিৎসা সহায়তা এবং এনজিও – গ্রাম্য সমিতির অনুমোদনে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের একটা কোটা ছিল। এছাড়া রোকনুজ্জামানের সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ সমাজসেবা অফিস থেকে কোন সুবিধা পাননি। এতে দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের সহযোগিতার মহৎ উদ্দেশ্য ভেস্তে গেছে। টাকার বিনিময়ে স্বাবলম্বীরা সুযোগ সুবিধা নিলেও অসচ্ছল ও অসহায় মানুষ বঞ্চিত হয়েছে সরকারি সহযোগিতা থেকে । বিগত বছরগুলোতে মণিরামপুর উপজেলায় পাওয়া বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ যাবতীয় সরকারি সুবিধাভোগীদের আর্থিক বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করলে যার সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
সুত্র বলছে, মণিরামপুরের সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রা ক্ষরীক জহিরুল ইসলামও অত্যন্ত ধুরন্ধর । টাকা ছাড়া কোন কাজ করেন না তিনি। জহিরুল ইসলাম ও তার বড় বোন মণিরামপুরের শ্যামকুড়ের আব্দুল কাদেরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে চাকরি পান। সে সময়ে আব্দুল কাদের অধিদপ্তরে চাকরি করতেন । তিনি এখন অবসরে। ওই নিয়োগ পরীক্ষার আগের রাতে তাদের অগ্রিম প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দেয়া হয় । এর জন্য তারা মোটা অঙ্কের অর্থও দেন আব্দুল কাদেরকে। সঠিক তদন্ত করলে যার সত্যতা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সুত্র বলছে, মণিরামপুরে সাবেক সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্যের ছত্রছায়ায় থেকে এমন কোন অপকর্ম নাই যা রোকনুজ্জামান ও জহিরুল করেন নাই । বিগত বছরগুলোতে তাদের দাপটে অস্থির ছিল স্থানীয়রা। যার জন্য দীর্ঘদিন যাবত একই স্থলে চাকরি করলেও অধিদপ্তর থেকে বদলী করা হয়নি। তখন অফিস ফাঁকি দিয়ে রোকনুজ্জামান ও জহিরুল রাজনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই বেশি সময় অতিবাহিত করেছেন ।
সুত্র বলছে, জেলা সমাজসেবা অফিসার অশিত কুমার সাহাও বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ছিলেন । মণিরামপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন অশিত কুমার সাহা । তিনি নিজেও নানা দুনীর্তি ও অনিয়ম করে আলোচিত হয়েছেন। মন্ত্রীর দাপটে অশিত কুমার সাহাও একই কর্মস্থলে দীর্ঘ দিন যাবত চাকরি করছেন । এজন্য মণিরামপুরের উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ও কম্পিউটার অপারেটর এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি ।
তবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর মণিরামপুরের সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রা ক্ষরীক জহিরুল ইসলামকে তিনি বদলীর আদেশ দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সেই আদেশ স্হগিত করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ২০ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত মণিরামপুরের সমাজসেবা অফিসের দুনীর্তির রিপোর্টে তথ্যগত ত্রুটির কারণে বয়স্ক,বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ব্যাংক এশিয়ার পরিবর্তে নগদে দেয়া হয় বলে ছাপা হয়েছে । আর এতেই মণিরামপুরের সমাজসেবা অফিসার ও কম্পিউটার অপারেটর তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। ওই ত্রুটির কারণে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে ছাপা হওয়া সব অভিযোগ মিথ্যা বলে অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে নির্দোষ দাবী করছেন ।
ইতিমধ্যে মণিরামপুরের সমাজসেবা কার্যালয়ের দুনীর্তি ও অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা । এই প্রতিবেদকের কাছে ওই সংস্থা র উদ্ধতর্ন এক কর্মকর্তা যার সত্যতা স্বীকার করেছেন ।#