কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় যশোরের সিভিল সার্জনের আন্দোলনবিরোধী বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিগত সময়ে আওয়ামীপন্থী পরিচয় দেওয়া সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানের ভোল পাল্টানোর চেষ্টার মধ্যেই ভিডিও ভাইরাল হয়। আলোচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক ও চিকিৎসক পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে তাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সূত্র জানায়, কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনের বিরোধিতা করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন তিনি। ঐ সময়ের বিক্ষোভ সমাবেশের ভিডিও বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এক মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান আন্দোলনকারীদের ফ্যাসিবাদী, জঙ্গি বলে আখ্যা দেন। তিনি দেশে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে হত্যাযজ্ঞ ভাংচুর চালানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা কোটা আন্দোলনের প্রতিটা দাবি মেনে নিয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনের নামে একদফা দাবি উঠিয়েছে। সেটা কখনও আমরা মেনে নিতে পারি না। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই, এবং এই শক্তিকে আমরা ঘৃণা করি। এই শক্তিকে আমরা প্রতিহত করবো।’ এসময় সকল চিকিৎসককে একদফা দাবির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
এদিকে, বিগত সরকারের সময়ে আওয়ামীপন্থী পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ভোল পাল্টানো শুরু করেন।
সূত্র জানায়, মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগ করা ডা. মাহমুদুল হাসান এর আগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছিলেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। এরপর তার ভাই কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও কেশবপুর আসনের সাবেক সংসদ আজিজুর ইসলামের ডিও লেটার নিয়ে তিনি যশোরের সিভিল সার্জন হন। একইসঙ্গে তিনি এই এমপি ও ক্ষমতাসীনদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহারে করে নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এখন তিনি ডানপন্থী পরিচয় দিয়ে প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার এবং পূর্বের দাপটকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে ভিডিও ফাঁস হওয়ায় তার অপচেষ্টা মাঠে মারা যাওয়ার মতো উপক্রম হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ভিডিও ফাঁস ও সিভিল সার্জনের অপচেষ্টা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন আলোচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক ও চিকিৎসক পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি তার ফেসবুকে ছাত্র আন্দোলনের সময়ে সিভিল সার্জনের বিরোধিতা করার বক্তব্য শেয়ার করে লিখেছেন, ‘যশোরের বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান, হ্যান্ডমাইক হাতে। শান্তি সমাবেশে তার বক্তব্য। শোনেন আপনারা। এখন নাকি উনি বিপ্লবী সাজিছেন। উনি এখন দাবি করতেছেন, উনি নাকি ছাত্রজীবনে শিবির করতেন। ফ্যাসিবাদের দোসর ও গণশত্রুদের ডেটাবেইজ হইতেছে। কাউকে রঙ পাল্টাইয়া বিপ্লবী সাজতে দেয়া হবে না।’
রিপন হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, হাসিনার পতনের আগে জামাত-বিএনপি ছাত্রজনতাকে সন্ত্রাসী-জঙ্গি বলে এখন যশোরের গণঅধিকার আর কথিত সমন্বয়কদের সাথে অভিযান করতেছেন আওয়ামী ডাক্তার যশোরের সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান। কেন আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, কেন হাসপাতালগুলোতে এখনও নিয়োগ বাণিজ্য হচ্ছে এগুলোর কারণ আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম।
এছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, যশোর সিভিল সার্জন অফিস ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানসমূহে ১১-২০তম গ্রেডে (৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি) ১৯৯টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অভিযোগ আছে, এসব নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য আট উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মোটা টাকার বাণিজ্য শেষ করেছেন ডা. মাহমুদুল হাসান। এখন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ভাইরাল হওয়া ভিডিও-বক্তব্য তার নিজের স্বীকার করে দাবি করেছেন, ‘পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের কিছুই করার ছিল না। ঐ কর্মসূচিতে আমরা স্বেচ্ছায় যাইনি।’ তার পরিবার ডানপন্থী পরিবার বলেও তিনি দাবি করেন।