সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মানববন্ধন,শিশু সোহানাকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ঝিকরগাছা,ফাঁসি চান গ্রেফতার নয়নের
যশোরের সমাজ নিউজ
সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মানববন্ধন,শিশু সোহানাকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ঝিকরগাছা,ফাঁসি চান গ্রেফতার নয়নের
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বায়সা-চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধে হত্যার প্রতিবাদে ও আটক আসামির দ্রুত শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। এ সময় নিহত শিশুটির সহপাঠি, শিক্ষক ও সাংবাদিকরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্লাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন। তারা অভিযুক্ত ধর্ষক শিশুটির আপন ফুফাতো ভাই মাদ্রাসাছাত্র নাজমুস সাকিব নয়নের (১৯) ফাঁসির দাবি করেন। এ সময় শিশুটির সহপাঠিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কার কথা জানায় সহপাঠি শিশুরা। তাদের দাবি-গ্রেফতার সোহানার ফুফাতো ভাই নয়ন দায় স্বীকার করেছে। তাকে দ্রুত ফাঁসি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের কাজ করার সাহস না পায়।
আজ সোমবার (১৬ জুন) সকাল ১০টায় মাদ্রাসা-সংলগ্ন বায়সা বাজারে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেয় বায়সা-চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই হাতে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। প্ল্যাকার্ডে লেখা,
‘আমার সোহানার বিচার চাই’, ‘ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করো’।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার কবির হোসেন।
এ সময় কান্নাভেজা কণ্ঠে বক্তব্য দেয় সোহানার সহপাঠীরা। তারা বলে, ‘আমরা এখন ক্লাসে যেতে ভয় পাই। সোহানা ছিল আমাদের বন্ধু, আমাদের মতোই একজন। আমরা চাই ওর হত্যাকারী যেন দ্রুত ফাঁসি হয়।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন-মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবদুল মালেক, অভিভাবক সদস্য রবিউল ইসলাম মিলন, ঝিকরগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম, শিক্ষক মনিরুজ্জামান, সহসভাপতি আতাউর রহমান জসি, দপ্তর সম্পাদক কে এম ইদ্রিস আলী, ‘সেবা’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মাস্টার আশরাফুজ্জামান বাবু, ডা. ইবাদ আলী, নিহত সোহানার বাবা আবদুল জলিল, বাজার কমিটির সভাপতি মোরশেদ আলম, ‘স্বপ্নচূড়া’ সংগঠনের সভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান, সাদা মনের মানুষ-খ্যাত সায়েদ আলী বিশ্বাস, গ্রামবাসী তরিকুল ইসলাম, জুয়েল রানা, জুলফিকার আলী, নাহিদ হাসান প্রমুখ।
এ সময় নিহত শিশুটির বাবা আবদুল জলিল বাকরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে কিছুই বুঝত না, বই আর খেলা ছাড়া কিছু জানত না। কেড়ে নেওয়া হয়েছে আমার বুকের ধন। আমি চাই, এই ঘাতক যেন আর কারও সন্তানের জীবন নিতে না পারে।’
প্রসঙ্গত, ১৩ জুন বিকেলে যশোর পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- ঈদের দিন নিখোঁজ সোহানার লাশ পরদিন (৮ জুন) সকালে পুকুরের পানিতে ভাসতে দেখে তার মামা ইলিয়াস হোসেন চিৎকার দিলে লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে নিহতের বাবা আব্দুল জলিল মেয়ের ঠোঁটে জখমের চিহ্ন ও রক্ত বের হতে দেখেন। বিষয়টি জানার পর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনার পর ঝিকরগাছা থানার ওসির নেতৃত্বে একটি টিম বুধবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে নিহতের ফুফাতো ভাই নাজমুস সাকিব নয়নকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশের কাছে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
নিহতের ফুফাতো ভাই নয়ন পুলিশকে জানায়, ঈদের দিন (৭ জুন) তার মামাতো ভাই রিয়াজকে মামা বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরে এসে দেখতে পায় তার ছোট বোন তন্বী রুমে ঘুমিয়ে রয়েছে। বাইরে মামাতো বোন সোহানা দোলনায় দোল খাচ্ছে। তাকে একা দেখে নয়নের যৌন বাসনা জাগে এবং সে তাকে জাপটে ধরে তার রুমে নিয়ে গলা ও মুখ চেপে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে সোহানা শ্বাসরোধে মারা গেলে নয়ন তাকে বাড়ির পাশের একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে আসে। এরপর তার বোনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বিষয়টি গোপন করতে সোহানাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কাহিনী সাজাতে থাকে। এরপর নয়ন তার বোনকে নিয়ে মামা বাড়ি যায় এবং তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায়।
গ্রেফতার নয়ন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের ইলিয়াস হোসেনের ছেলে। সে মণিরামপুর উপজেলার মাছনা কওমি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে।