মণিরামপুরের সমাজসেবা অফিসারদের ক্ষমতার উৎস কী ?
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের মণিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরীকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন যাবত একই কর্মস্থলে থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেবাপ্রত্যাশীদের জিম্মি করে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিগত সরকারের আমলে একজন প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় তারা অপ্রতিরোধ্য ছিলেন । সরকারের পরিবর্তন হলেও কমেনি তাদের ক্ষমতার দাপট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরের মণিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রোকনুজ্জামান ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরীক জহিরুল ইসলাম পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে একই স্থলে চাকরি করে যাচ্ছেন।
এর মধ্যে রোকনুজ্জামান ২০১৯ সাল থেকে ও জহিরুল ইসলাম ২০১৯ সালের ১সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। সরকারি চাকরিতে তিন বছরের বেশি একই স্থলে থাকার নিয়ম না থাকলেও তারা দীর্ঘদিন যাবত একই জায়গায় বহাল তবিয়তে থেকে দুনীর্তি ও অনিয়ম করে যাচ্ছেন। দুইজনের বাড়ি মণিরামপুরে। তারা উভয়েই যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ছত্রছায়ায় লালিত ছিলেন। এর মধ্যে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রোকনুজ্জামান এর শশুর আবুল হোসেন স্থানীয় পৌর (কামালপুর) আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী হওয়ায় বিগত সরকারের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের নেক নজরে ছিলেন। আর সেই সুবাদেই খুলে যায় আবুল হোসেনের মেয়ের জামাই উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রোকনুজ্জামানের ভাগ্য । মন্ত্রীর দাপটে বিগত সময় কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এনজিও এবং সমিতির নিবন্ধন, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন । প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের অফিসার ও কমচারীদের বদলী বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেছেন রোকনুজ্জামান । অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরীক জহিরুল ইসলামকে দিয়ে নানা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন।
বিগত সরকারের সময় থেকে বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতাধারীদের মোবাইল ফোনের নগদ নাম্বারে ভাতার টাকা প্রদান করায় তাদের অপকর্ম করতে আরও বেশি সুবিধা হয়েছে । ওই নাম্বারের স্থলে নিজস্ব সিন্ডিকেটের নাম্বার বসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন উপজেলা অফিসার ও অফিস সহকারী । ভুক্তভোগীরা টাকা না পেয়ে অফিসে গেলে ব্যস্ততার অযুহাত দেখিয়ে তাদের ফেরত দেয়া হয়েছে । অনেকের সাথে খারাপ ব্যবহারও করা হয়েছে । এভাবে কয়েক দফা ভাতার টাকা নিয়ে অবশেষে মোবাইল নাম্বার ভুল হয়েছে বলে সঠিক নাম্বার দেয়া হয়নি । বিশেষ করে নতুন ভাতার কার্ডধারীদের থেকে এ রকম অনৈতিক সুবিধা বেশি নেয়া হয়েছে । মজার ব্যাপার হচ্ছে,যেসব ভাতাধারীদের প্রকৃত মোবাইল ফোন নাম্বার ভুলে অন্য নাম্বারে টাকা গেছে প্রত্যেকেটা নাম্বারে নগদ খোলা ছিল। অথচ দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী দের মধ্যে সত্তর শতাংশ লোকেরই নগদ খোলা নেই ।
সুত্র বলছে, বিগত প্রায় পাঁচ বছর মণিরামপুর উপজেলার সমাজসেবা অফিসে রোকনুজ্জামানের সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ এনজিও এবং সমিতির অনুমোদন নিতে পারেন নিই। এনজিও এবং সমিতির নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে মাসের পর মাস নানা অযুহাত দেখিয়ে ঘোরানো হয়েছে । অথচ তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গেলে রোকনুজ্জামান নিজেই কাগজপত্র তৈরী করে রাতারাতি অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন । তিনি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে এসব কাজ করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন । বিগত পাঁচ বছর মণিরামপুর উপজেলায় রেজিষ্টেশন পাওয়া সমিতি ও এনজিওগুলো নিরপক্ষভাবে অডিট করলে যার সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
সুত্র বলছে দুনীর্তি অনিয়ম করে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রোকনুজ্জামান নামে বে_নামে অঢেল সম্পদ ক্রয় করেছেন । মণিরামপুরে নিজ গ্রামে নিমাণ করেছেন আলীশান বাড়ি । এছাড়া সাতক্ষীরার সুলতানপুরে দশ কাঠা জমির উপর নিমাণ করেছেন বিশাল স্থাপনা । যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা ।
সুত্র বলছে, মণিরামপুরের সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরীক জহিরুল ইসলামের পরিবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত । এজন্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের
নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপরাধ করেও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরেই । মণিরামপুরের নেহালপুর ইউনিয়নের একজন সমাজসেবা অফিসারের মাধ্যমে জহিরুল ইসলাম ও তার বড় বোন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে চাকরি নিয়েছেন। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রোকনুজ্জামানের সাথে সখ্যতা থাকায় জহিরুল ইসলামও প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন ।
জহিরুল মনিরামপুরের হাকোবায় বিশাল প্রাচীর নির্মাণ করে আলীশান বাড়ি করেছেন। গ্রামে সচরাচর অত বড় উচু প্রাচীর ওয়ালা বাড়ি দেখা যায় না। যা জেলখানার সাদৃশ্য বলে স্থানীয় রা জানিয়েছেন । গ্রামে কিনেছেন লাখ লাখ টাকার জমি।
সুত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও এখনো দাপট কমেনি মণিরামপুরের সমাজসেবা অফিসার রোকনুজ্জামান ও অফিস অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরীক জহিরুল ইসলামের । ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর যশোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক অশিত কুমার সাহা স্বাক্ষরিত
১৩৫৮নং স্মারকে মণিরামপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরীক জহিরুল ইসলামকে ঝিকরগাছা সরকারি শিশু সদনে বদলীর আদেশ দেওয়া হয় । তার স্থলে যোগদান করতে বলা হয় ঝিকরগাছা সরকারি শিশু সদনের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরীক ওমর ফারুককে । ওমর ফারুক মণিরামপুরে যোগদান করতে গেলে দায়িত্ব দেননি জহিরুল ইসলাম । তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রোকনুজ্জামানের সহায়তায় ওই বদলী বাতিল করেন। সঙ্গত কারণেই মণিরামপুরের সমাজসেবা কার্যালয়ের রোকনুজ্জামান ও জহিরুল ইসলামের ক্ষমতার উৎস নিয়েও নানান প্রশ্ন উঠেছে । ওই দুই অফিসারের অপশাসন থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগীরা ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মণিরামপুরের সমাজসেবা অফিসার রোকনুজ্জামান দাম্ভিকতার সুরে বলেন, আমার কোন বক্তব্য নেই, আপনি যা খুশি লেখেন।
মণিরামপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রা ক্ষরীক জহিরুল ইসলাম, অসুস্থতার জন্য তিনি দীর্ঘদিন যাবত একই কর্মস্থলে রয়েছেন । তিনি কোন দুনীর্তি ও অনিয়ম করেনি । এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন ।
যশোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক অশিত কুমার সাহা বলেন, অভিযোগের বিষয়গুলো তার জানা নাই। পত্রিকায় রিপোর্ট হলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইদুর রহমান খান বলেন, দুনীর্তি ও অনিয়ম করে পার পাওয়ায় সুযোগ নেই । অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।